কমিউনিটি ০৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশি কমিউনিটির পথিকৃৎ আইয়ুব আলী মাস্টারকে সম্মান জানিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসে স্মারক ফলক উন্মোচন

post

ব্রিটিশ বাঙালি ইতিহাসের একজন পথিকৃৎ আইয়ুব আলী মাস্টারকে সম্মান জানিয়ে একটি স্মারক ফলক গত রোববার (৩ নভেম্বর) টাওয়ার হ্যামলেটসের ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রিটে উন্মোচন করা হয়েছে। এই স্থানটি সেই জায়গার কাছাকাছি, যেখানে তিনি এবং শাহ আব্দুল মজিদ কোরেশি ১৯৪৩ সালে ইন্ডিয়ান সিমেন’স ওয়েলফেয়ার লিগ-এর অফিস পরিচালনা করতেন।

আইয়ুব আলী মাস্টার পূর্ব লন্ডনে ১৯২০-এর দশকে দক্ষিণ এশীয় নাবিক ও অভিবাসীদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর কাজ ব্রিটিশ বাঙালিদের জন্য সমাজ সংগঠন ও কল্যাণমূলক সহায়তার ভিত্তি স্থাপন করে।

১৮৮০ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী আইয়ুব আলী মাস্টার ১৯২০-এর দশকে পূর্ব লন্ডনে বসতি স্থাপন করেন এবং কমার্শিয়াল স্ট্রিটে শাহ জালাল রেস্টুরেন্ট চালু করেন, যা এশীয় কমিউনিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তাঁর বাসা ১৩ স্যান্ডিস রো ছিল বাঙালি নাবিকদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যারা কঠিন পরিস্থিতি ও চুক্তিভিত্তিক সীমাবদ্ধতা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।

তিনি তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও ব্যবহারিক সহায়তা প্রদান করতেন, যেমন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবন্ধন করা এবং প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণে সহায়তা। ১৯৪৩ সালে তিনি ইন্ডিয়ান সিমেন’স ওয়েলফেয়ার লীগ প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে এই সহায়তাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল তাদের “পিপলস্ প্ল্যাকস্ স্কিম” - এর অংশ হিসেবে এই ফলক স্থাপন কর্মসূচির আয়োজন করে। এই প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শুরু হয়, যার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্থান ও ঘটনার স্মরণে ফলক স্থাপন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোনয়নের ভিত্তিতে আইয়ুব আলী মাস্টার সর্বোচ্চ ভোট পান।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আটটি ফলক স্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেনঃ তাসাদ্দুক আহমেদ, মার্জ হিউসন, নিকোলাস কালপেপার, টমি ফ্লাওয়ার্স, সওয়াবুল্লাহ মুনশি এবং ক্লারা গ্রান্ট।

উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইয়ুব আলী মাস্টারের প্রপৌত্রী পারুল হুসেইন, টাওয়ার হ্যামলেটসের কালচার বিষয়ক লীড মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসেইন, স্বাধীনতা ট্রাস্ট - এর সদস্যসহ স্থানীয় কমিউনিটির প্রতিনিধিরা।

পারুল হুসেইন বলেন, “আমাদের পরিবার এই ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। আমাদের দাদু ছিলেন প্রথম দিকে আসা বাঙালি অভিবাসীদের একজন পথিকৃৎ। তিনি ১৯১৯ সালে লন্ডনে আসেন এবং তখনকার বাঙালি অভিবাসীদের অনেককে সহায়তা করেন, কারণ তিনি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ১৯৪০ - এর দশকে ইন্ডিয়ান সিমেন’স ওয়েলফেয়ার লিগের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়ের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন।”

কাউন্সিলর কামরুল হোসেইন বলেন, “আয়ুব আলী মাস্টার শুধু একজন কমিউনিটি সংগঠক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তাঁর প্রচেষ্টায় বহু বাঙালি অভিবাসী লন্ডনে নতুন জীবনের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। আজকের এই ফলক আমাদের বৈচিত্রময় ইতিহাসকে সম্মানিত করে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের সমাজ গঠনে বাঙালি অভিবাসীরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।”

স্বাধীনতা ট্রাস্ট—এর চেয়ার জুলি বেগম বলেন, “ব্রিটিশ বাঙালি কমিউনিটির ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রচারের লক্ষ্যে স্বাধীনতা ট্রাস্ট ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যাতে এটি ব্রিটিশ ইতিহাসের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের ২৫তম বার্ষিকীতে আইয়ুব আলী মাস্টারের স্মারক ফলক উন্মোচনে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি স্থানীয় জনগণকে যে সহায়তা দিয়েছেন, তা ব্রিটিশ ওয়েলফেয়ার স্টেট প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।”

স্বাধীনতা ট্রাস্ট সম্প্রতি বিনামূল্যে বাংলা ঐতিহ্য ভ্রমণ চালু করেছে, যেখানে আয়ুব আলী মাস্টারের কাজ সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ রয়েছে।

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “আয়ুব আলী মাস্টার ছিলেন একজন অগ্রদূত, যাঁর নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের বারাতে সমাজকল্যাণের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং তাঁকে একজন বিশ্বস্ত নেতা ও সমাজকর্মী হিসেবে সম্মানিত করেছে। তাঁর উত্তরাধিকার আজও প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, এবং তাঁর অবদানকে সম্মান জানাতে এই স্থায়ী ফলক স্থাপন অত্যন্ত উপযুক্ত।

টাউন হলের কাছাকাছি এই ফলক স্থাপন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি নাগরিক নেতৃত্ব ও জনসেবার প্রতীক। এই শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রতীকী এবং সকলের জন্য সহজলভ্য।”

যারা ফলকটি সরাসরি দেখতে চান, তারা ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রিটের ড্রেওয়েট হাউজের পাশে, লন্ডন ই১ ১আরটি-তে যেতে পারবেন।

 

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner